top of page

Tanvir Alim

Born in Chittagong, Bangladesh, Tanvir started working as an arts manager in different cultural centers since 2009. Previously his works have been shown in (In) flux Monoprint Show by Shunno Arts Space, Artivist's December by Epiphania Gallery, Longitude Latitude 4 'Identity and Belonging' curated by Shehzad Chowdhury, 11th Contemporary Art Exhibition, Tokyo and many other places. He is going to take part in the 9th Edition of Uronto Residential Art Exchange Program. He is the winner at Queer Tasveer Summer 2011 – Gaysi photo contest.

 

Tanvir takes a deep interest in the sexuality politics, intersectionality of causes and social justice. He has curated several art projects to embrace diversity through interdisciplinary art in Bangladesh. His films and video arts were screened in Neukölln Short Film Walk, Germany (2012), 6th International Festival of Docufilm on Liberation and Human Rights, Bangladesh (2012), The &Proud Film Festival, Yangon (2014), Salzburg Global Seminar (Home, Safety, and Belonging), Austria (2017).

 

In addition to his arts and activism, Tanvir volunteers for an emotional support helpline in Bangladesh. In his spare time, he enjoys hiking, and travel photography.

 

 

Untitled

by Tanvir Alim

ব্যবচ্ছেদ করার সময় মৃত দেহের গলা থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত চিরে ফেলা হয় এবং মাথার করোটি খুলে ফেলা হয়। ব্যবচ্ছেদ শেষ করার পর তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো যেমন পাকস্থলী, কিডনি, হার্ট, লিভার ইত্যাদি বাহির করে লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর এই অঙ্গগুলো ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে পুনরায় মৃতদেহের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং পরিশেষে মৃতদেহের শরীর সেলাই করে দেয়া হয়।

তোমার কি মনে আছে একদিন সন্ধ্যায় একটা ঘাস-ফড়িং এসেছিল আমাদের ঘরে। আমরা বিছানায় বসে টেলিভিশন দেখছিলাম। আর ফড়িঙটা বার বার উড়ে উড়ে যাচ্ছিল। বরাবরই পোকাতে ভীষণ ভয় ছিল আমার সেজন্য ফড়িংটার ডানা কেটে দেওয়া হয়েছিল। আর তারপরও ভয় না কমলে ফড়িংটাকে জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হল। তুমি খুব আফসোস নিয়ে বলেছিলে “ইস! মরে যাবে ফড়িং টা।” এখনো ভর-সন্ধ্যায় মাঝে মাঝে ঘরে ফড়িং আসে, পিঠে গজানো ডানা ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় আমাকে তাড়া করে বেড়ায়!  

নীল আকাশটা আজ ঘুটঘুটে কালো। কোথাও কোন তারাও দেখা যায় না। সারাদিন অনেক বৃষ্টি হল। এমন দিনে আমরা রিকশায় করে মাঝে মাঝে একসঙ্গে বাড়ি ফিরতাম। দুই বছরের বেশী হল আজ সেই পথ ধরে হাঁটা হয়নি। আমি প্রায়ই ভাবি আমরা যেই বাসাতে থাকতাম সেই বাসার সামনে দিয়ে একবার হেঁটে যাব। শুনেছি এখন সেখানে আর কেউ থাকেনা। গুমোট অন্ধকারে শূন্য ঘরের আকাশী দেয়ালগুলো কি আমাদের কথা মনে করে?

কিংবা যেখানে ওরা চাপাতি দিয়ে তোমাকে আঘাত করল, সেখানে কি এখন কোন রক্তের চিহ্ন আছে? আমার প্রায়ই মনে হয় সেখানটায় গিয়ে একবার ভাল করে খুঁজে দেখি। সংবাদমাধ্যমে জেনেছি যারা সেদিন বিকেলে এসেছিল, তারা কেউ এখনো ধরা পড়েনি। আচ্ছা তারা কি খুন করবার পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলেছিল? তাদের শার্টের হাতায় কি কোন রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে? এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় যে ইতিহাসের পাতায় এই রক্তের কথা কোনদিন লেখা হবেনা। কেমন করেই বা লেখা হবে? এই রক্ত তো আর আমাদের তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থার কারও জন্য সম্মান বয়ে আনেনি। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বলেছেন যে সরকার এলজিবিটি অধিকার সমর্থন করবে না যারা ব্লগারদের মত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য দায়ী। আসলেই কি কুপিয়ে হত্যা শব্দটার অর্থ উনি অনুভব করতে পারেন? কিংবা কে জানে, আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম। মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ; 

সব কিছু আগের মতই আছে। প্লেট, গ্লাস, ফুলদানি, বিছানা, জুতা-মোজা, চিরুনি, আয়না। এই একবছরে এই সমাজ সংসারের কোন কিছুই বদলে যায়নি। কলের পুতুলের মত সব আগের মতই আছে।  তোমাকে মেরে ফেলবার পর সব সংবাদ মাধ্যমে লেখা হল যে তুমি একজন নাট্যকর্মী। জুলহাজের বন্ধু। সবাই চেপে গেল সমকামীদের অধিকার আদায়ে তোমার সংগ্রামের কথা। হয়ত তোমার পরিবার থেকেই বিষয়টা গোপন করে ফেলা হল। ছোটবেলায় বইয়ে পরিবার আর সমাজের সংজ্ঞা পড়েছিলাম। এই এত বছর পরে সংজ্ঞাগুলো অনেক কঠিন মনে হয় আজকাল।  

মৃত্যুর পরেও আমাদের সমাজ সমকামিতার স্বীকৃতি তোমাকে দিল না। এই নিয়ে তুমি মন খারাপ করোনা। অনুচ্চারিত থাক না হয় কিছু ক্রোধ। আকাশে উড়ে যাক হলুদ ফানুশ। আর জঙ্গলের ভুল পথে ফুটে থাক কিছু আলোর ফুল। 

তোমার সাহসিকতার কথা ভাবতে কেমন অন্যরকম লাগে। আমি নিজে এখনো তোমার কবরের মুখোমুখি হবার মত সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি। কিংবা কে জানে, কষ্ট বয়ে বেড়ানোর মাঝেও হয়ত কোন সুখ লুকান থাকে। 

তোমার ব্যাগে নাকি কয়েকদিন ধরেই একটা মুগুর থাকত। তোমার লাশ যারা দেখেছে, এমন একজন আমায় সেদিন বলছিলেন, তোমার হাতের মাঝখানটা ছিল কাটা, দুই ভাগ করা। তুমি কি হাত দিয়ে চাপাতির আঘাত থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলে? আমি শুনেছি ওরা তোমার মেরুদণ্ড আর মাথা আলাদা করে ফেলেছিল। চারিদিকে কেবল রক্ত আর রক্ত, তার মধ্যে ধস্তাধস্তি, কিছু পায়ের ছাপ। শুনে একটুও ভয় লাগেনি আমার। এই কথা শুনবার পর থেকে আমার কেবল একটা কথাই ঘুরে ফিরে মনে হত। অনেকদিন আগে তুমি একবার বলেছিলে একটা নাটকের দৃশ্যের মহড়ায় গিয়ে তুমি পিঠে ব্যথা পেয়েছিলে। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই তোমার পিঠে ভীষণ ব্যথা হত। 

ছোট বাচ্চারা যেভাবে কোলবালিশ নিয়ে ঘুমায়, তুমিও সেভাবে ঘুমাতে। সেই ঘুমের ভঙ্গিতেই তোমার লাশ পড়ে ছিল মেঝেতে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে রক্তের বিছানায় শুয়ে শুয়ে তুমি কি ভাবছিলে? 

এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় যে এই দেশে কোনদিন ওই অপরাধীরা ধরা পড়বে না। দূর থেকে তারা কেবল দেখতে থাকবে আমাদের। কিংবা কাছে থেকে। রাষ্ট্রের কাছে এই মৃত্যু কেবল মাত্র একটা ছোট্ট সংখ্যা ছাড়া আর কিছু না। 

পৃথিবীব্যাপী সমকামী জনগোষ্ঠীকে বারবার প্রকাশ্যে আসার জন্য উৎসাহিত করা হয়। তুমি নিজেও তোমার ফেসবুক থেকে শুরু করে থিয়েটার কিংবা পরিবার – সবক্ষেত্রেই তোমার পরিচয় গোপন না রেখে কাজ করে গেছ। অথচ তোমার মৃত্যুর পর সব কেমন বদলে গেল। আমরা সবাই এখন সর্বদা ভীত সন্ত্রস্ত, যোগাযোগ মাধ্যমে গোপন থাকার কৌশল রপ্ত করায় আমরা এখন অনেক ব্যস্ত। কোথাও যেন ভুল করেও আমাদের কোন চিহ্ন না রয়ে যায়। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে যে দূর থেকে এসব দেখে তুমি কি মুচকি মুচকি হাসো? 

গত সপ্তাহে আমি বৈষম্য বিলোপ আইন বিষয়ক একটা আলোচনায় অংশ নিতে গিয়েছিলাম। টেবিলের আরেক মাথা থেকে আমাকে পরিষ্কার বলে দেয়া হল সরকার এমন কিছু করতে পারবে না যা ৩৭৭ ধারার বিপক্ষে যাবে। এই অশান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পেরে তারা এলো জি বি টি শব্দটা শুনতেও এখন নারাজ। সবকিছু এখন কেমন যেন অনেক অন্তঃসার শূন্য মনে হয়। আরেকটু বেশী সম্মান কি রাষ্ট্রের কাছে তোমাদের প্রাপ্য ছিল না? 

কাল রাতে আমাদের নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখলাম। একটা ঝিম ধরা বিকেল। খেয়া ঘাটে একটা পরিত্যক্ত নৌকা বাঁধা। তাতে থৈ থৈ করছে জল। তার উপরে মেঘের ছায়া। জল ভরা শ্রাবণের ঘন কাল মেঘ। এরপরেই দেখলাম একটা বদ্ধ ঘর। কিছু পুড়ে যাওয়া সাদা মোমবাতি। আগরবাতির তীব্র গন্ধ। আর বাক্সের তলা থেকে খুঁজে বের করা কিছু পুরনো স্মৃতি। 

ধীর পায়ে যখন দুপুরগুলো আমার নিঃসঙ্গতার দিকে আজকাল এগিয়ে আসে, তোমার কথা যখন আমার অনেক মনে হয়, আমি প্রায়ই তখন আমাদের পুরনো মেসেজ গুলো পড়ে দেখি। যেখানে আমাদের পরিচয় থেকে শুরু  করে অনেকদূর পর্যন্ত পথচলার একটা ঠিকানা পাওয়া যায়। তোমার কি মনে আছে অতোদিন আগের কথা? 

আমাদের জীবনে ভালোবাসা এসেছিল অসম্ভব পাওয়া হয়ে। ভালোবাসা অতিথির মত এসে আমাদের জীবনে কয়েকটা সুন্দর দিন কাটায়, তারপর চলে যায়। 

আমি জানিনা তুমি এখন কোথায়? লুব্ধকের চাইতেও উজ্জ্বল কোন নক্ষত্র হয়ে, বহু আলোকবর্ষ দূরে বসে তুমি কি আমাদের দেখতে পাও? আজ মনে হয় আসলেই অমাবস্যা। বারান্দায় অনেকক্ষণ বসেও আকাশের চাঁদটাকে দেখতে পেলাম না। আর আমাদের দুজনের, একান্তই আমাদের যেই চাঁদটা ছিল, সে তো অনেক আগেই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও আমার কেন যেন মনে হয়, নিশ্চয়ই তোমার সাথে আমার খুব তাড়াতাড়ি একদিন দেখা হবে। হয়ত রাস্তায় কিংবা কোন ভিড়ের মাঝে। হুট করে আমার চারপাশ ছেয়ে যাবে ধুসর ঘন কুয়াশায়। আমাকে আরও বেশী অপ্রস্তুত করে দিয়ে অল্প হেসে তুমি জানতে চাইবে, “আপনি কেমন আছেন?”

bottom of page